আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের (এমপি) বিপুল অবৈধ সম্পদ ও দুর্নীতির নানা তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। গত ১৫ বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে এসব ব্যক্তিরা অঢেল সম্পদ গড়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যেই ৬৫ জন সাবেক মন্ত্রী ও এমপির অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করেছে, আর এই বিষয়ে দুদকে অভিযোগের পাহাড় জমছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের দুর্নীতি এবং অবৈধ সম্পদের তথ্য একে একে প্রকাশিত হচ্ছে। কিছু কিছু ব্যক্তির সম্পদ গত ১৫ বছরে ২.৫ লাখ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে, যা নজিরবিহীন বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে সম্পদ বৃদ্ধির শীর্ষে আছেন টিপু মুনশী, ডাক্তার জাহিদ মালেক, নসরুল হামিদ, দিপু মনি এবং এনামুর রহমান। গত ৫ বছরে সম্পদ বৃদ্ধির শীর্ষে আছেন আনিসুল হক, তাজুল ইসলাম, জুনাইদ আহমেদ পলক, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাধন চন্দ্র মজুমদার এবং ইমরান আহমেদ। গত ১৫ বছরে শীর্ষ সম্পদ বৃদ্ধির তালিকায় আছেন জাকির হোসেন, গোলাম দস্তগীর গাজী, নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, কামাল আহমেদ মজুমদার এবং জাহিদ আহসান রাসেল। সাবেক এমপিদের মধ্যে রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হকের অবৈধ সম্পদ বৃদ্ধির হার অকল্পনীয়, যা ২.৫ লাখ গুণ বেড়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুর্নীতি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। মে ও জুন মাসে দুদক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ এবং সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।
শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কিছু কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন, আবার অন্যদের বদলি করা হয়েছে। অনেকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে অথবা অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী এম সরোয়ার হোসেন দুদকে আবেদন করেছেন, যাতে শেখ হাসিনা সরকারের ২৫ জন সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এবং অন্তত ৪০ জন সাবেক সংসদ সদস্যের অবৈধ সম্পদের তদন্ত করা হয়।
দুদক ইতোমধ্যে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাইফুল আলম (এস আলম) এবং পদ্মা ব্যাংকের সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে, যারা দেশের ব্যাংক থেকে বিলিয়ন টাকার দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত।
দুদক বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছ থেকে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির আর্থিক তথ্য চেয়েছে। এই তথ্য পাওয়ার পর আগামী সপ্তাহে দুদক আরও উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে পারে।