সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে চোরাকারবারী হযরত আলী ও
তার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সাংবাদিক ও এলাকাবাসী। এই
বাহিনীর অন্যায় কর্মকান্ড বন্ধ করে তাদের কোটিকোটি টাকার অবৈধ অর্থ-
সম্পদ উদ্ধার করতে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।
পুলিশ ও সাংবাদিক সূত্রে জানাযায়- সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে তাহিরপুর
সীমান্তের কচুয়াছড়া এলাকা দিয়ে চোরাকারবারী হযরত আলী,আলাউদ্দিন,কালাম
মিয়া ও নজরুল ইসলাম নজর আলীগং গত ১৮অক্টোবর (শুক্রবার) রাত ৩টায় প্রায় দেড়
কোটি টাকার কসমেটিকস ও শাড়িসহ মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে ইঞ্জিনের নৌকা
যোগে টাংগুয়ার হাওর দিয়ে নদীপথে ভৈরব নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি এলাকার লোকজন
জানানো পর,অনলাইন ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেন-সুনামগঞ্জ
জেলার সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়াসহ আরো একাধিক
সংবাদকর্মীরা। এই ঘটনায় প্রশাসনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গত শুক্রবার (১
নভেম্বর) রাত ৯টায় চোরাকারবারী হয়রত আলী বাদী হয়ে উপরের উল্লিখিত তার
৩সহযোগীকে স্বাক্ষী দিয়ে চাঁদা চাওয়ার মিথ্যা ও বানোয়াট নাটক সাজিয়ে
সাংবাদিক মোজাম্মেলকে হয়রানী করার জন্য তার পরিচয়সহ সবকিছু অজ্ঞাত দিয়ে
থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। এদিকে সাংবাদিক মোজাম্মেল অসুস্থ্য
থাকার কারণে গত ৬মাস যাবত বাসার বাহিরে যেতে পারেনা। আর এঘটনাটি
জানাজানি হওয়ার পর সাংবাদিক সমাজসহ সর্বস্থরের জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক
সমালোচনার ঝড় উঠে। কারণ এরআগে ২০২১সালে চোরাকারবারী হযরত আলী ও তার
গডফাদার আওয়ামীলীগ নেতা তোতলা আজাদগংদের চোরাচালান বাণিজ্য নিয়ে
সংবাদ প্রকাশের জের ধরে- দৈনিক সংবাদের পত্রিকার তাহিরপুর প্রতিনিধি কামাল
হোসেন ও দৈনিক জালালাবাদ তাহিরপুর প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে
একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছিল হয়রত আলীর ছোট ভাই নিষিদ্ধ ঘোষিত
ছাত্রলীগ নেতা আলী আকবর। পরে আদালতে অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায়
মামলাটি খারিজ করে দেন বিজ্ঞ বিচারক। অথচ ছাত্রলীগ নেতা আলী আকবর
২০২২সালের এপ্রিল মাসে সীমান্তের গোলগাঁও-কলতাপাড়া এলাকায় গিয়ে
চাঁদাবাজি করার সময় বিজিবি গ্রেফতার করে এবং মামলা দিয়ে জেল হাজতে
পাঠায়। আর সেই মামলা এখনও চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে আরো জানা গেছে-জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর
ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিশিষ্ট
চোরাকারবারী হযরত আলী(৩৯) ওয়ান এলিভেনের সময় বাগলী বস্তি থেকে গরু চুরি
করে ঢাকায় পালিয়ে যায়। এঘটনার ১বছর পরে অন্যের গরু মনে করে তার নিজের
মামার ৩টি গরু চুরি করে ভারতে বিক্রি করার সময় গরুসহ হয়রত আলীকে
স্থানীয়রা আটক করে। পরে বাগলী গ্রামের ঈমান আলীর বাড়িতে সালিশের মাধ্যমে
তাকে জুতাপেটা করে গ্রাম্য-বিচারকরা। এরপরে সীমান্ত চোরাকারবারীদের
সংগঠিত করে একটি সিন্ডিকেড তৈরি করে হযরত আলী। তারপর রাজস্ব ফাঁকি
দিয়ে ভারত থেকে অবাধে কয়লা ও চুনাপাথরসহ মাদকদ্রব্য, কসমেটিকস, চিনি,
শাক-সবজি, মাছ-মাংশ, সপারী, পেয়াজ, রসুন পাঁচার শুরু করে। এমতাবস্থায় ২০১৪
সালের মার্চ মাসে মদের চালান নিয়ে তার সহযোগী টাংগাইল জেলার বিশিষ্ট
চোরাকারবারী ও যুবলীগ নেতা কালাম মিয়াকে সাথে নিয়ে টাংগাইলে গেলে,
মদসহ হযরত আলীকে পুলিশ আটক করে। ওই সময় সহযোগী কালাম মিয়া
সুকৌশলে পালিয়ে যায়। এঘটনার পর অবৈধ ব্যবসা পরিচালনার সুবিধার্থে
যুবলীগ নেতা কালাম মিয়া বীরেন্দ্রনগর এলাকার কৃষক সিদ্দিক মিয়ার মেয়েকে
বিয়ে করে ঘরজামাই হয়। এদিকে সেচ্ছা সেবকলীগ নেতা হয়রত আলী আবার
এলাকায় ফিরে আসে এবং চোরাচালান সিন্ডিকেটকে শক্তিশালী করার জন্য পাশের
মধ্যনগর উপজেলার কার্তিকপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের যুবলীগ সভাপতি
বিখ্যাত চোরাকারবারী আলাউদ্দিনকে যুক্ত করে। এরপর ২০১৬সালের ডিসেম্বর মাসে
আমদানীকারক কুদ্দুস মিয়ার ডিপু থেকে প্রায় ৩মেঃটন কয়লা চুরি করে
সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হযরত আলী,তার ভাই ছাত্রলীগ নেতা আলী আকবর ও আলী
হোসেন। পরে চুরি হওয়া কয়লা উদ্ধার করে বাগলী শুল্কস্টেশনের সমিতিতে অনুষ্ঠিত
সালিশের মাধ্যমে অভিযুক্ত হযরত আলী,তার ভাই আলী হোসেন ও আলী আকবরকে
আটক করে পুলিশের নিকট সোপর্দ করে ব্যবসায়ীরা। এঘটনার প্রেক্ষিতে থানায়
দায়েরকৃত মামলায় হযরত আলী ও তার ২ ভাই প্রায় ৩মাস জেল খেটে জামিনে বের
হয়ে এসে এলাকাবাসীর ওপর অত্যাচার শুরু করে। এবং তার গডফাদার আওয়ামীলীগ
নেতা তোতলা আজাদগংদের সহযোগীতা নিয়ে বাড়িয়ে দেয় চোরাচালান ও
চাঁদাবাজি বাণিজ্য। তাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে চলতি ২০২৪ সালের মার্চ মাসে
শুল্কস্টেশনের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনতা মিলে হযরত আলী,তার দুই ভাই ও সহযোগী ৩জন
চোরাকারবারীকে গণধৌলাই দেয়। এরপর আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর হযরত আলী
তার চোরাচালান সিন্ডিকেড টিকিয়ে রাখার জন্য বাগলী আমদানী কারক সমিতির
সভাপতির ভাগিনা নজরুল ইসলাম নজর আলীসহ আরো একাধিক লোকজনকে সংযুক্ত
করে। এবং স্থানীয় সাংবাদিকসহ এলাকার নিরীহ মানুষদের মিথ্যা মামলা দিয়ে
হয়রানী করা ও নানান ভাবে অত্যাচার শুরু করেছে বলে ভোক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
এব্যাপারে কয়লা আমদানী কারক নজরুল ইসলাম, ডাঃ মনির হোসেন ও কৃষক মঞ্জুল
মিয়া বলেন- সরকার পতনের পর সেচ্ছা সেবকলীগ নেতা হযরত আলী তার বাহিনী
নিয়ে চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করাসহ মিথ্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিক ও
এলাকাবাসীকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তাছাড়া আমরা সাংবাদিক মোজাম্মেলের শুরু
নাম শুনেছি কিন্তু তাকে কোনদিন বীরেন্দ্র নগর সীমান্ত এলাকায় আসতে দেখিনি।
উত্তর শ্রীপুর ইউপির বর্তমান মেম্মার শাজাহান খন্দকার বলেন- বাগলী আমদানী
কারক সমিতির সভাপতির ভাগিনা যুবলীগ নেতা নজরুল মিয়া নজর ও হয়রত আলী
গংরা বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার চিনাকান্দি সীমান্ত দিয়ে গত ঈদের সময় উট পাচাঁর
করলে বিজিবি আটক হয়। চোরাকারবারী নজর আলী একজন বিশিষ্ট হুন্ডি ব্যবসায়ী।
তার মোবাইল চেক করলে লাখলাখ টাকার হুন্ডি ব্যবসার প্রমান পাওয়া যাবে।
সাংবাদিক মোজাম্মেলসহ আরো ৩-৪জন সাংবাদিক তাদের চোরাচালানের সত্য
সংবাদ প্রকাশ করার কারণে এরআগেও মিথ্যা মামলার স্বীকার হয়েছে। এব্যাপারে
প্রশাসনের সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।
সুনামগঞ্জ জেলার সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া বলেন- সীমান্ত
গডফাদার তোতলা আজাদ ও তার সোর্স হযরত আলীগংরা চোরাচালান ও
চাঁদাবাজি করে কোটিকোটি টাকার মালিক হয়েছে। তাদের চোরাচালান
বাণিজ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশের কারণে আমাকে অনেক বার হয়রানী করেছে। তাই
সীমান্ত গডফাদার ও সোর্স বাহিনীকে গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের
সহযোগীতা কামনা করছি। তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ দিলোয়ার
হোসেন বলেন- সাংবাদিক মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগের আসল
ঘটনাটি বুঝতে পেরেছি, আমরা কাউকে অহেতুক হয়রানী করব না। আমরা সব
সময় অন্যায়ের বিপক্ষে,সত্য ও ন্যায়ের পথে কাজ করছি এবং করে যাব। যারা অপরাধ
করছে তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবেনা।