মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া-সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে দিনদিন বেড়েই চলে
ব্যাটারী চালিতো অটোরিক্সা। নিয়ম-নীতির তোয়াক্ষা না করে বেপরোয়া চলা-ফেরা
করার কারণে প্রতিদিনই ঘটছে দূর্ঘটনা,অকালে ঝড়ে যাচ্ছে তাজা প্রাণ। গত
২দিনে পৃথক ঘটনায় শিশুকন্যাসহ ৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশ পৃথক স্থান থেকে মৃতদের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ পৃথক ভাবে জব্দ করেছে ২টি অটোরিক্সা। থানায় দায়ের করা
হয়েছে মামলা।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- গত রবিবার (১৭ নভেম্বর) রাত ১০টায়
জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা-বেহেলী সড়কের রাজাপুর নামক সেতুর সামনে
যাত্রীবাহী মোটর সাইকেল ও ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সার মধ্যে মুখমুখি সংঘর্ষ
হয়। এঘটনায় মোটর সাইকেলে থাকা দুই বন্ধুর মধ্যে আশিক নুর (৪০) ছিটকে
পাকা রাস্তা পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত জখম হলে ঘটনাস্থলেই তার
মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। তার সাথে থাকা অপর বন্ধু সোলেমান মিয়া (৩৮) একই ভাবে
মোটর সাইকেল থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে গুরুতর আহত হলে তাকে ঘটনাস্থল থেকে
উদ্ধার করে রাত অনুমান সাড়ে ১২টায় সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে
যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষনা করেন। এঘটনার পর পুলিশ
অভিযান চালিয়ে অটোরিক্সা জব্দ করেছে কিন্তু ঘাতক অটোরিক্স চালক ইয়ামিন
মিয়া (৩৫) পালিয়ে যায়।
এঘটনার প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে মৃত আশিক নুরের ছোট
ভাই রাশিদ মিয়া বাদী হয়ে ঘাতক অটোরিক্সা চালক ইয়ামিনকে আসামী করে
থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতাল
মর্গে পাঠিয়েছে। অপরদিকে এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাহিরপুর উপজেলার
সোলেমানপুর-তাহিরপুর সড়কের ভাটি তাহিরপুর নামক স্থানে ব্যাটারী চালিতো
অটোরিক্সার নিচে পৃষ্ট হয়ে ফারহা আক্তার (৬) নামের এক শিশুকন্যা গুরুতর আহত হয়।
পরে তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর
আহত শিশুকন্যার অবস্থা আশংকাজনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে
প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রæত সুনামগঞ্জ পাঠায়। পরে
রাত অনুমান ৮টায় সুনামগঞ্জ যাওয়ার সময় পথের মধ্যেই আহত শিশুকন্যা ফারহা
আক্তারের মৃত্যু হয়। এখবর তাৎক্ষনিক ভাবে জানাজানি হওয়ার পর ঘাতক অটোরিক্সা
আটক করে এলাকাবাসী। আর চালাক অনিক মিয়া (২২) পালিয়ে যায়। মৃত শিশুকন্যা
উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের পাটাবুকা গ্রামের শরীফুল ইসলামের মেয়ে।
ঘটনার ২দিন আগে ভাটি তাহিরপুর গ্রামে অবস্থিত তার নানার বাড়িতে বেড়াতে
এসে ছিল ওই শিশুকন্যা ফারহা। কিন্তু নিজ বাড়িতে আর ফেরা হলো না।
এদিকে গত শনিবার (১৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ
সেতুর উপর থেকে সিএনজি চালিতো অটোরিক্সা চালক সুজিত দাস (৩০) এর
গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সে ওই উপজেলার হলদিপুর-চিলাউড়া ইউনিয়নের
গোপড়াপুর গ্রামের সোহাগ দাসের ছেলে। ঘটনার রাতে স্থানীয়রা ওই চালকের রক্তাক্ত
মৃতদেহ সেতুর উপরে পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেয়। তবে দুর্বৃত্তরা চালক
সুজিতকে হত্যা করে তার সিএনজি ছিনতাই করে পালিয়ে গেছে বলে ধারনা করা
হচ্ছে। এঘটনার প্রেক্ষিতে অজ্ঞাত আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করা
হয়েছে বলে জানা গেছে।
জগন্নাথপুর থানার ওসি মোখলেছুর রহমান,তাহিরপুর থানার ওসি দিলোয়ার
হোসেন ও জামালগঞ্জ থানার ওসি কামাল হোসাইন পৃথক ঘটনায় শিশুকন্যাসহ ৪
জনের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।