♥বন্ধু থেকে প্রেম, অবশেষে পাগল♥

লেখায়ঃ সাব্বির হোসেন বাপ্পি।

পরিচয়টি ছিলো সেই ১৮ সাল থেকে। হঠাৎ করে অচেনা লোকটি এসে ভাংগা হ্নদয়ে জড়িয়ে পড়লো। তাহার সাথে চলতে চলতে বেশ জীবন কেটে যাচ্ছিলো। আস্তে আস্তে পুরনো সব ব্যথা সে দুর করতে যাচ্ছে। এবং কি দুর করে ফেলছিলো। কথায় আছে কেউ যদি সমুদ্রের ঐ মাঝখানটিতে পড়ে যায়। সেখান থেকে বাঁচানোর জন্য কেউ যদি অনেক চেষ্টা করে থাকে। সে রকম এই লোকটিও করেছিলো। সমুদ্র থেকে তুলে এনে নতুন জীবন দিলো। ছেলে টি মেয়েটাকে ভালোবেসে একটি নাম দিলো নামটি ছিলো সুলতানা।
ছেলেটি অনেক কষ্টের মাঝেও সুলতানার ভালোবাসা পেয়ে ভালো থাকতে ছিলো সব সময়। তারা দুজনি ছিলো তখন ১৮ সালের নতুন অর্নাস ১ ম বর্ষের ছাত্র, একি কলেজে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে তাদের পথ চলা। এক সাথে কলেজ যাওয়া। দুপুরে এক সাথে খাবার খাওয়া। তাদের যেনো সুন্দর একটি দিন ছিলো। লোকে তাদের এই চলাফেলা দেখে মুগ্ধ হতো। এভাবে চলতে চলতে এক সময় বন্ধু থেকে প্রেমে পরিনত হয় দুজনেই। বেশ ভালই চলতে যাচ্ছে তাদের জীবন, সুলতানার কোন কিছু দরকার পড়লে। ছেলেটি শতব্যস্তটার মাঝে থাকলেও তার কাজ করে দিতো। সুলতানা বয়সে ছেলেটির ১/২ বছরের ছোট হবে। কিন্তু সে কখনই নিজে নিজে চলতে পারতো না।সে জন্য ছেলেটি তার সংঙ্গে সব সময় থাকতো। যেনো কোন সমস্যা না হয় সুলতানার। রাস্তা পাড়ি হতে পারতো না। একা কোন গাড়িতে যাতায়াত করতে পারতো না। সে জন্য সব সময় ছেলাটা তার পাশে পড়ে থাকতো। সুলতানার যখন ঘুরতে মন চাইতো। শত ব্যস্ততা থাকলেও ছেলেটি সুলতানাকে নিয়ে অচেনা কোন জায়গায় ঘুরতে যেতো। সারাদিনের জন্য যতক্ষণ না তার মনের আশা পুরণ না হতো। ততক্ষণ তারা ঘুরে বেরাতো। জীবনে সুখ যদি কোন কিছু থাকে বিশ্বাস করেন এর মাঝে তারা সুখ খুঁজে পেতো। ছেলেটির যদি কোন ইচ্ছা থাকতো সুলতানা সব কিছু ছেড়ে দৌড়িয়ে আসতো ছেলেটির পাশে। এই দুটি জুটি ছিলো ভিন্ন ধরনের। রাস্তায় হেটে গেলে খুব সুন্দর লাগতো দুজনকে। সুলতানা যেমন লম্বা ছিলো ছেলেটিও তেমন লম্বা ছিলো। কেউ দেখে নিন্দা করতে পারতো না। দূর থেকে দেখে মানুষ তাদেরকে ভালোবাসতো। তাদের প্রেমটা ছিলো বন্ধত্বের মতো। আর এই দুনিয়াতে যদি কোন সম্পর্ক বন্ধত্বে পরিনত হয়। সেটা হলো সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক।এবাবে তারা চলতে থাকে। ফুসকার দোকান, চটপটির দোকান, এবং কি দুপুরে খাবার হোটেলটি ছিলো তাদের জন্য বড় একটি মুহুর্ত। ছেলেটি যেমন নিয়ম করে সুলতানার খুঁজখবর নিতো। মেয়েটিও তেমন পাগল ছিলো কথা বলার জন্য। একটি বার কথা না বলতে পারলে মেয়েটির অবস্থা কঠিনতম হয়ে যেতো। সেজন্য ছেলেটি নিয়ম করে তাকে ফোন করতো। শতব্যস্তটা থাকতে হতো ছেলেটির সে জন্য সব সময় ফোন দিতে পারতো না। কিন্তু যখনি ছেলেটি সময় পেতো। অন্য কোন কিছু চিন্তা না করে আগে সুলতানাকে ফোন করতো। এভাবে তাদের প্রেমটা চলতে থাকে। সুলতানা ছিলো একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। শিক্ষক হিসাবে বাচ্চাদের বাবা মা রাও সুলতানাকে অনেক ভালোবাস। শিক্ষক হিসাবে তিনি অনেক ভালো ছিলো। সেনজন্য বাড়িতে এসেও ঠিকমতো আরাম করতে পারতো না। ছেলে মেয়েরা বাড়িতেও পড়তে আসতো। সেগুলার সাথেই সব সময় থাকতো। এর মাঝে মাঝে সুলতানার ভালোবাসাকে স্বরণ করতো। এভাবে সেই ১৮ সাল, ১৯ সাল,২০ সাল, ২১ সাল,২২ সাল, এখন ২৩ সাল চলতেছে। এই ২২ সালের শেষের দিক থেকে তাদের জীবনে কিছুটা হতাস নেমে আসে। মানে মেয়ে বড় হয়ে গেছে। নানান জায়গা থেকে বিয়ে আসে। তো মেয়েটা একটা একটা করে অজুহাত দিয়ে বিয়ে ভেংগে ফেলে। আর ছেলেটাকে বলতে থাকে সব কথা। এদিকে ছেলেটি হলো পরিবারের সবার ছোট, তার কোন রকম প্রশ্ন আসে না বিয়ে করার এখন। এদিকে সুলতানার একটার পর একটা বিয়ে আসতেই থাকে। এ নিয়ে ছেলেটি মানষিক টেনষনে পড়ে যায়। কি করবো সে বোঝে উঠতে পারে না।না পারে কাউকে বলতে না পারে সুলতানাকে বোঝাতে। ছেলেটি এক মধ্য সাগরে পড়ে যায়। ঘুম নেই খাওয়া নেই। সকাল হলে দৌড়িয়ে অফিস করতে যেতে হয়। অফিসে মনযোগ নেই। এদিকে প্রেমিকার হাহাকার বুকে নিয়ে। পাগল বেশে ঘুরে বেরায় এই ইট পাথরের শহরে। ছেলেটির যেমন পড়াশুনা শেষ হয়নি মেয়েটারও পড়াশুনা শেষ হয়নি। মেয়ে মানুষের যেমন বিয়ে হলে সব সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু ছেলেদের প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে অনেকটাই সময় লেগে যায়। সে সময়টিতে কখনও কখনও ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না। এই প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে ভালোবাসা হারাতে হয়। ভালোবাসা পেতে গেলে জীবনকে গুছানো বড়ই সমস্যা হয়। জীবন যদি গুছাতে না পারা যায় তখন আবার ভালোবাসাও হারিয়ে যায়। আমি অনেক দেখে আসছি অনেক ছেলেদের এরকম পরিস্থিতি হয়। অবশেষে প্রেমিকার কাছে বেইমান, প্রতারক,অভিনেতা হিসাবে পরিচিত লাভ করে। তো এখন ছেলেটি এভাবে পাগলের মতো ঘুরে বেরায়। নিজের মনকে প্রশ্ন করে, একবার প্রেমিকার দিকে তাকায় আবার অন্যদিকে পরিবারের দিকে তাকায়, তখন তার মন থেকে কোন উত্তর সে পায় না। আবার সে পাগল বেশে ঘুরতে থাকে। এভাবে ছেলেটির জীবন চলতে থাকে। রাতে যখন ঘরে আসে তখন সেই প্রেমিকার চোঁখের জল দেখতে হয়। প্রশ্ন করে কি ভাবলা কি সিন্ধান্ত নিলা। ছেলেটি তখন চুপ করে থাকে কোন উত্তর দিতে পারে না তার প্রেমিকাকে। এদিকে মেয়ের বাড়িতে প্রচুর চাপ সহ্য করতে হচ্ছে মেয়েকে। মেয়েটিও কোন দিক খুঁজে পায় না। একদিকে তার ভালোবাসা হারাতে পারছে না অন্যদিকে মা বাবার কথা রাখতে পারছে না। একটি করে দিন যাচ্ছে আর তাদের জীবনে, অভিশাপ নেমে আসছে। একদিকে প্রেমিকার প্রশ্নের উত্তর অন্যদিকে নিজের মনের কাছে প্রশ্ন এসব ভাবতে ভাবতে ছেলেটার মাথায় একটি সমস্যা তৈরী হয়ে যায়। ভালো কোন চাকরি নেই, ভালো সেলারি হয়নি নতুন চাকরি, অন্যদিকে তাদের পারিবারিক সমস্যা এসব ভাবতে ভাবতে একটা সময় ছেলেটির মাথায় সমস্যা হয়ে যায়। ছেলেটি তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার কারণে তার সুলতানার সাথে সে যোগাযোগ করতে পারে না। এদিকে সুলতানা তার প্রেমিকের জন্য হতাস, ঘুম নেই, খাওয়া নেই, শুধু ফোন করে কিন্তু ফোনে তার প্রেমিককে পান না। সুলতানা কিন্তু জানেনা কার প্রেমিক আজ ভারসাম্য হয়ে গেছে। ছেলেটি পথে পথে ঘুরে আর কি জেনো ভেবে মাথা চুলকায়, কিন্তু কিছু মনে করতে পারে না। এভাবে থাকতে থাকতে ছেলেটি এক সময় পাগল হয়ে যায়। দুনিয়ার কোন কিছু তার আর মনে পড়ে না। অন্যদিকে মেয়েটিরও আর কোন খুঁজ খবর নিতে পারে না। কারণ ছেলেটি পাগল হয়ে গেছে। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে, কোন রেললাইন এ পড়ে থাকে। এভাবে তার এখন দিন চলা। মেয়েটি কেমন আছে কোথায় আছে। সেটাও আজ নেই কারো জানা। অদৌ কি মেয়েটির বিয়ে হয়েছে? সংসার হয়েছে? এসবের কিছু তার নেই জানা। ছেলেটি শুধু একটি নাম মুখে নিয়ে বেরায়, ঐ নামটিই ঠুঁটে দিয়ে বের হয়,যে নামটি ভালোবেসে মেয়েটিকে দিয়েছিলো সুলতানা, সুলতানা সুলতানা।
তারিখঃ ২০/০১/২৩ ইং শুক্রবার।

এই রকম আরো কিছু খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button