ভোরের বাংলাদেশ নিউজ:
ক্ষমতাচ্যূত শেখ হাসিনার সীমাহীন ক্ষমতার লোভ আওয়ামী লীগের লক্ষ কোটি নেতা কর্মী সমর্থকদের ঘুরে দাঁড়ানোর পথকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে।তার দেশত্যাগের এক মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত তিনি সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেননি কিংবা গ্রহনযোগ্য কাউকে দলের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধও করেননি। নির্বাসিত হওয়ার পরও ওআবার ক্ষমতা ফিরে আসার দিবাস্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন। অথচ গণ অভ্যুত্থানের পরবর্তী নাজুক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সমর্থকরা কি অবস্থায় রয়েছে সে ব্যাপারে তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। দেশে এখন প্রতিদিন যা ঘটছে এবং যা বলালি হচ্ছে তা দেখে-শুনে সহ্য করতে করতে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মী সমর্থকদের ট্রমা হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
কারণ শেখ পরিবারের পাশাপাশি তার সরকারের মন্ত্রী এমপিদের বেসুমার লুটপাটের দায় শোধ করতে হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সমর্থকদেরদের।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বৈরাচারের পতন নতুন কোন ঘটনা নয়। এর আগে সেনা স্বৈরশাসক এরশাদ গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যূত হয়ে জেলে গেছেন।বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াও ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দীর্ঘদিন কারাবরণ করেছেন কিন্তু তারা কেউ দেশ ছেড়ে পালায়নি।ফলে দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন করতে গিয়ে চরম নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েও মনোবল হারায়নি।
কিন্তু শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার বিস্ফোরণের মুখে দলকে ঠেলে দিয়ে নিজে বাঁচার জন্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। এতে তার দল আওয়ামী লীগ কি বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে তা কি তিনি একবারও ভেবেছিলেন! তার এই পলায়ন নিয়ে দলের অভ্যন্তরেও এখন অনেক প্রশ্ন । তিনি পালাতে না চাইলে কি হতো?। ক্ষুব্ধ জনগন কি তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলতো? এর সহজ উত্তর হচ্ছে না। সেনাবাহিনী তাকে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নিত। পড়ে তাকে জেলে পাঠাতো। তাতে আওয়ামী লীগকে এরকম বিপর্যের মুখে পড়তে হতো না। বরং এক পর্যায়ে সারাদেশ তার মুক্তির জন্য গর্জে উঠতো। এটাই আওয়ামী লীগের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস।
শেখহাসিনাতো একটা নস্যি মাত্র
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরও আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিল।জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের স্ত্রী জোহরা তাজউদ্দিন আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। তিনি দলে আহবায়ক হিসেবে সারাদেশ ঘুরে ঘুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সমর্থকদের সংগঠিত করে ছিলেন। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে এসে দু:সময়ে জোহরা তাজউদ্দিনের নেতৃত্বে সংগঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন। কিন্তু। জোহরা তাজউদ্দিনের ত্যাগের কোনো মূল্য দিলেননা। শুধু তাই নয়, তার মন্ত্রী সভার সবচেয়ে সৎ ও ব্রিলিয়ান্ট মন্ত্রী
সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে মন্ত্রীসভায় এক প্রকার ওএসডি করে রাখাহয়। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র বলেই নিরবে শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। পড়ে দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েও অন্য নেতাদেরমত ধান্ধাবাজি করতেন না। শেখ হাসিনা তাকেও অবমূল্যায়ন করে দলের বিশাল সম্মেলনে সবার সামনে সৈয়দ আশরাফকে তার নিজের মুখ দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাউয়্যা কাদেরের মত রাস্তা থেকে উঠে আসা ব্যক্তির নাম ঘোষণা করিয়ে চরম অপমান করলেন। অনেকের মতে শেখ হাসিনা দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কে সরে দাঁড়ানোর ঈঙ্গিত দিলে সৈয়দ আশরাফ নিজে থেকেই সম্মেলনে সবার সামনেই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহনে অস্বীকৃতি জানিয়ে নিজের সম্মান রক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু শেখ হাসিনা তাকে সে সুযোগ দেননি।কারণ শেখ হাসিনা কাউকে সম্মান দিতে জানেন না। কোনো দিন দেননি।তিনি শুধু ক্লিইপেট্রারমত ব্যবহার করতে শিখেছেন।
তার চারপাশের চাটুকারদের কারনে কোন ব্যক্তিত্ববান মেধাবী লোককে দলের সামনে কাতারে আসতে পারেনি। শেখ হাসিনা দেখে শুনে নিকৃষ্টতম লাফাঙ্গাদের নিয়ে দলের কার্যনির্বাহী কমিটি বানিয়েছেন। যাদের না ছিল মেধা না ছিল ব্যক্তিত্ব। ফলে এরা সারাক্ষণ শুধু হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে, হ্যাঁ জয়যুক্ত ধ্বনি দিয়ে শেখ হাসিনার তোষামোদি করে নিজেদের গদিরক্ষার পাশাপাশি বেসুমার লুটপাট করেছে। আমি মনে করি এদের প্রত্যেকের মৃত্যু দন্ড না হলেও নূনতম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কারা দন্ডতো হওয়াই উচিৎ।
কেননা সকল জবাবদিহিতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েএরা শেখ হাসিনার চোখের সামনে দিনের পর দিন ব্যাংক বীমা শেয়ার বাজার লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। এত সব দেখে শুনেও শেখ হাসিনা কাউকে কিছুই বলেননি।
ফলে একজনের দেখা দেখি আরেকজন দেখে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পদাধিকারী নেতাকর্মীরা দেশটাকে হরিলুটের মহোৎসব পরিনত করেছিল।
শুধু দলের মন্ত্রী এমপি পদাধিকারী নেতা কর্মীরাই নয়,
পাশাপাশি
সরকারের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরাও আযান দিয়ে এই লুটের মহোৎসবে লেগে যায়। অথচ শেখ হাসিনা টু শব্দটিও করেননি।
টানা ১৫টি বছর ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠাগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার কোন উদ্যোগই নেয়নি। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রশাসনকে কেমন হতে হবে বা কেমন হওয়া দরকার এই বিষয়টি নিয়ে তিনি বিন্দুমাত্রও চিন্তা করেননি। রাজনৈতিক উত্থান পতনের প্রলয়ের মধ্যে দিয়ে তিনি রাজনীতিতে এসে বারবার জীবনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েও রক্ষা পেয়েছেন শুধুমাত্র ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগের কারনেই। অথচ সেই আওয়ামী লীগকে চরম বিপর্যয়ের মধ্য ঠেলে দিয়ে নিজে পালিয়ে গিয়েও এখনো পর্যন্ত শুধু নিজের ও পরিবারের কথাই ভাবছেন। এটা খুবই বিস্ময় কর।
দেশান্তরি হয়েও এখনো তার মনোভাবের বিন্দু মাত্র পরিবর্তন হয়নি। তিনি একবারও আত্ম সমালোচনা করে দেখননি এই দুনিয়ার কোথাও কেন তার একটুও ঠাঁই হচ্ছেনা। নানাবিধ কারনে ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছে। সেখানে কতদিন থাকতে পারবেন তাও অনিশ্চিত। কিন্তু দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সমর্থকেরা দিশেহারা। এসব কিছু জেনেও তার হুস হচ্ছেনা। তিনি দলের নেতৃত্ব ধরে রেখে পুনরায় ক্ষমতা ফিরে পাবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন। এর ফলে আওয়ামী লীগ ক্রমাগত দুর্বল হচ্ছে।দল না থাকলে শেখ হাসিনার পক্ষে এজনমে আর ক্ষমতায় ফিরে আসার কোন সম্ভাবনা নেই। আন্তর্জাতিক আদালতে তিনি গণ হত্যাকারী স্বৈরাচারী হিসেবে দন্ডিত হবেন। দেশে শতাধিক মামলার আসামি হিসেবে আইন আদালতেই তার জীবন শেষ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, তার অথবা কাউয়্যা কাদেরদের ডাকে দেশের কোথও দশ বিশজন লোকও প্রতিবাদে সামিল হবেনা। সুতরাং দল না থাকলে স্নপ্ন দেখে লাভ নেই। শেখ হাসিনা এবং শেখ পরিবারের কাউকে দিয়ে বিপন্ন আওয়ামী লীগকে আর দাঁড় করানো যাবেনা। এমতাবস্থা সৎ ও সচ্ছ নতুন নেতৃত্ব ছাড়া আওয়ামী লীগ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেনা। শেখ হাসিনা যতদ্রুত এই সত্যিটি উপলব্ধি করবেন ততই মঙ্গল।
