হাফিজুর রহমান:
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণা ও মানবপাচারের এক জটিল চক্র আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই চক্রটি সম্প্রতি নতুন একটি রুট ব্যবহার করছে — বাংলাদেশ থেকে কিরগিজ স্থান, তারপর বেলারুশ ও পোল্যান্ড হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানুষ পাঠানোর নামে প্রতারণা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তদন্তে জানা গেছে, প্রথমে দেশ থেকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলা হয়। দালালরা উন্নত জীবন, ভালো চাকরি ও দ্রুত ইউরোপে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নেয় কয়েক লাখ টাকা। এরপর যাত্রীদের ভিসা বা ভ্রমণের অজুহাতে মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়।
যাত্রার শুরুতেই প্রতারণা
মানব পাচারের মূল হোতা কামরুল হাসান লিটন সহ আরো অনেকে সম্প্রতি ২০২৫ সালের ১১ জুলাই বাংলাদেশ থেকে একদল মানুষ কিরগিজ স্থানে পাঠানো হয় একটি বিদেশি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে। তাদের জানানো হয়েছিল, সেখান থেকে ইউরোপে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছে শুরু হয় তাদের দুঃস্বপ্ন।
বাসা ভাড়া, পুলিশি হয়রানি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য স্থানীয় দালালচক্র ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আরও ডলার দাবি করে। মুক্তিপণের মতো করে তাদের পরিবারের কাছ থেকেও টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি
দেশ থেকে যাত্রার আগে প্রতিজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে নেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা। বিদেশে পৌঁছানোর পরও তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। টাকা না দিলে ভয়ভীতি, নির্যাতন, এমনকি ফেরত পাঠানোর হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগীদের পরিবারের অভিযোগ, দেশে অবস্থানরত কিছু দালাল ও বিদেশে অবস্থানরত চক্রের সদস্যরা মিলে এ ধরণের অপকর্ম চালাচ্ছে। অনেক সময় এই চক্র নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে।
তদন্ত ও আইনগত উদ্যোগ
মানবপাচারবিরোধী ইউনিট, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই রুটে সক্রিয় চক্রগুলোকে শনাক্তে কাজ করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশে কাজ বা বসবাসের উদ্দেশ্যে যাওয়ার আগে অবশ্যই সরকার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে যাচাই করা উচিত। অচেনা দালালের প্রলোভনে পা দিলেই হতে পারে ভয়াবহ পরিণতি।
সচেতনতার আহ্বান
বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্নে অনেকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, পরিচিত জন কিংবা দালালের দেওয়া “সহজ উপায়ে বিদেশ যাওয়ার অফার” যেন কেউ যাচাই ছাড়া বিশ্বাস না করেন।
বিদেশে নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে নাগরিক সচেতনতা বাড়ানো, আইন প্রয়োগে কঠোরতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোই এখন সময়ের দাবি।
