৫৪
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
টাঙ্গাইল-৬(নাগরপুর-দেলদুয়ার) সংসদীয় আসনটি নাগরপুর উপজেলার ১২টি ও দেলদুয়ার উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি ১৮ জন। তারা সবাই মাঠ পর্যায়ে বিএনপির ৩১দফা সম্বলিত লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি গণসংযোগ করছেন। সভা-সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। একই সঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশিদের মধ্যে দুজন যুক্তরাজ্য প্রবাসী। অনেকেই বলছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান তাদেরকে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর পাশাপাশি মাঠে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
টাঙ্গাইল জেলা নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল-৬(নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের আব্দুল মান্নান নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নূর মুহাম্মদ খান এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নূর মুহাম্মদ খান নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নূর মুহাম্মদ খান নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির খন্দকার আবু তাহের নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির খন্দকার আবু তাহের নির্বাচিত হন। একই সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির গৌতম চক্রবর্তী দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বীরমুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আব্দুল বাতেন নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়নে খন্দকার আব্দুল বাতেন পুনরায় এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের আহসানুল ইসলাম টিটু দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাবেক মন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন। তিনি কয়েক বছর আগে পরলোকগমণ করেন। এবার তার স্ত্রী দিপালী চক্রবর্তী মনোনয়ন প্রত্যাশি। এ আসন থেকে বিএনপির আরও ১৭ প্রার্থী মনোনয়ন চাইছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশিরা হচ্ছেন- বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নূর মুহাম্মদ খান, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি এবং সাবেক ছাত্রদল ও যুবদল নেতা মো. রবিউল আওয়াল লাভলু, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় হল শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহŸায়ক ও সম্মানিত সদস্য মীর আবুল কালাম আজাদ ওরফে রতন, জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আলী ইমাম তপন, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহŸায়ক মো. শরিফ উদ্দিন আরজু, ঢাকা মহানগর উত্তরের জাসাস- এর আহŸায়ক ও নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. শরীফুল ইসলাম স্বপন, উপজেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. ইকবাল হোসেন খান, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল ইসলাম রেজা, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা রাজীব আহমেদ, টাঙ্গাইল জেলা জিয়া পরিষদের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শামীম চৌধুরী ওরফে বাবু চৌধুরী, দেলদুয়ার উপজেলা বিএনপি নেতা মো. জুয়েল সরকার, যুক্তরাজ্যের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন, যুক্তরাজ্য প্রবাসী সমাজসেবক মোহাম্মদ মাইনুল আলম খান কনক, দেলদুয়ার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএম ফেরদৌস হোসেন। এছাড়া নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা এমএ ছালাম ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হবিও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি।
সরেজমিনে বিএনপির নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, সাবেক মন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তীর মৃত্যুর পর অনেকেই বিএনপি দলীয় মনোনয়ন চাইছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশি গৌতম চক্রবর্তীর স্ত্রী দিপালী চক্রবর্তী এবং সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নূর মুহাম্মদ খান এখনও নির্বাচনি প্রচারণায় নামেন নি। গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর মনোনয়ন প্রত্যাশিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সবাই বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। ইতোপূর্বে তাদের কেউ কেউ দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশির তালিকা জেলার মধ্যে এ আসনে বেশি হলেও তারা প্রত্যেকেই দলীয় সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবেন বলে জানিয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি নেতারা প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত দলীয় সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। গণসংযোগের দৌঁড়ে জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি পরিশ্রমী নেতা মো. রবিউল আওয়াল লাভলু, ক্লিন ইমেজের অধিকারী বিশিষ্ট শিল্পপতি আতিকুর রহমান আতিক এবং নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহŸায়ক ত্যাগী নেতা মীর আবুল কালাম আজাদ ওরফে রতন অন্যদের চেয়ে প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন। এ তিন নেতা কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহŸায়ক মো. শরিফ উদ্দিন আরজু এলাকায় ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত। মনোনয়ন প্রত্যাশিরা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনি মাঠে ভোটের আমেজ সৃষ্টি করেছেন। জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আলী ইমাম তপন ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত গৌতম চক্রবর্তীর স্ত্রী দিপালী চক্রবর্তী সহ অন্য প্রার্থীরা সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহের ব্যবধানে নিজস্ব সমাবেশ করছেন। পাড়া-মহল্লার চায়ের আড্ডা, হাট-বাজার ও জনবহুল স্থানে ঘুরে ঘুরে ৩১ দফা সম্বলিত লিফলেট বিলি করেছেন। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন টাঙিয়ে নিজেদের প্রার্থীতা জানান দিচ্ছেন।
অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে, এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেতে জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি পরিশ্রমী নেতা মো. রবিউল আওয়াল লাভলু, ক্লিন ইমেজের অধিকারী বিশিষ্ট শিল্পপতি আতিকুর রহমান আতিক এবং নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহŸায়ক ত্যাগী নেতা মীর আবুল কালাম আজাদ ওরফে রতন, নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহŸায়ক মো. শরিফ উদ্দিন আরজুর মধ্যে প্রচারণার যুদ্ধ জমে ওঠেছে। তবে কেন্দ্রীয় বিএনপিও মাঠ পর্যায়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। সাংগঠনিক তদন্ত টীম মাঠ জরিপ করছে। তবে মিরাকল ঘটিয়ে উল্লেখিত মনোনয়ন প্রত্যাশিদের টেক্কা দিয়ে নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা এমএ ছালাম দলীয় মনোনয়ন পেলে আশ্চর্যের কিছু থাকবেনা বলে জানাগেছে।
টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ডা. একেএম আব্দুল হামিদ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আখিনুর মিয়াকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী দলের অঙ্গ সংগঠন শ্রমিক মজলিসের জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল মান্নান শেখ। এ ছাড়া এনসিপি’র মেজর (অব.) মো. সালাউদ্দিন, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর সদস্য ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার কবীর হোসেন নিজ নিজ দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন।
টাঙ্গাইল-৬(নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনের দুই উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৪৭ হাজার ৮১৫জন। এরমধ্যে নাগরপুর উপজেলায় মোট ভোটার দুই লাখ ৬৩ হাজার ৫৭জন। পুরুষ এক লাখ ৩৩ হাজার ৫২ জন, নারী ভোটার এক লাখ ২৯ হাজার ৯৮১ জন, তৃতীয় লিঙ্গের(হিজরা) ভোটার রয়েছে ৪ জন। দেলদুয়ার উপজেলায় মোট ভোটার এ লাখ ৮৪ হাজার ৭৫৮ জন। পুরুষ ৯৩ হাজার ৫৮৪ জন, নারী ভোটার ৯১ হাজার ১৭১ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের(হিজরা) ভোটার রয়েছে ৩ জন।
