পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি:
লালমনিরহাট জেলাধীন পাটগ্রাম পৌর শহরের থানাপাড়া এলাকায় একটি তেলের ডিপো নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মেসার্স রাহিম এন্টারপ্রাইজ নামের এই প্রতিষ্ঠানটি পাটগ্রাম বাজারে জনবহুল এলাকার মধ্যে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও লাইসেন্সের শর্তাবলি স্পষ্টভাবে উপেক্ষা করে পরিচালিত হচ্ছে, যা ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি রংপুর সিও বাজারে একটি এলপিজি গ্যাস পাম্প বিস্ফোরণে যে ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তাতে করে জনবহুল এলাকায় এধরনের প্রতিষ্ঠান না থাকার পক্ষে মত দিয়েছে সচেতন সমাজের নেতৃবৃন্দ। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বলেন জনবহুল এবং স্পর্শকাতর এলাকায় এধরনের প্রতিষ্ঠান না থাকায় উত্তম। সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায় বাজার সংলগ্ন এলাকায় জ্বালানি তেলের ডিপো মেসার্স রাহিম এন্টারপ্রাইজের আশপাশেই রয়েছে ৫১ বিজিবির পাটগ্রাম হেডকোয়ার্টার, রসুলপীর জামে মসজিদ, পাটগ্রাম থানা, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গোডাউন , ওয়াকশপ ,ব্যাংক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা রয়েছে ফলে এখানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়, ইতিপূর্বে প্রতিষ্ঠানটিতে বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে অগ্নিকাণ্ডে একজন অগ্নিদগ্ধ হওয়ার খবর শোনা যায়,তবে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো দুর্ঘটনা যদি সংঘটিত হয় সেক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি শত শত মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির মালিক রাহিমুল হক মজুমদার ভারাটিয়া দোকানে এই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তিনি ২০২০ সালের ৮ জুন একটি নতুন ‘ঞ’ ফরমের লাইসেন্স গ্রহণ করেন এবং বর্তমানে সেটি দিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ডিপোটি পাটগ্রাম উপজেলা ভূমি অফিসের রাস্তা হয়ে থানায় যাওয়ার পথে রাসূলগঞ্জ মৌজায় ,জে এল নং ২০, দাগ নং এসএ ৬৮৯, বিএস ৩১৮৩, খতিয়ান এসএ ২৬১, ডিপি ৬১৭ এ অবস্থিত।
এঘটনায় রাহিম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রাহিমুল হক মজুমদার বলেন আমি নিয়ম কানুন মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করছি। এসময় স্থানীয় সংবাদ কর্মীরা মাঠির নিচে পুতিয়ে রাখা ট্র্যাকিং পরিদর্শন করতে চাইলে তিনি সুকৌশলে এড়িয়ে গেলেও ডিপোর মাটির নিচে তেলের ট্যাংকি পুঁতে রেখে তিনি অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়ায় তিনি কৌশলে মাটির নিচে পুঁতে রাখা তেলের ট্র্যাকিংটি রংপুর থেকে দক্ষ লোকজন নিয়ে এসে অপসারণ করার সময় স্থানীয় লোকজন ও সাংবাদিকরা তাকে হাতেনাতে ধরে ফেললে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে ভুল শিকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
লাইসেন্সের শর্তানুসারে, একটি তেল ডিপোর চারদিকে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত ফাঁকা জায়গা (বিপত্তি) রাখা বাধ্যতামূলক, যাতে যেকোনো অগ্নিকান্ড কিংবা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে দমকল কর্মীরা সহজে কাজ করতে পারে এবং ছড়িয়ে পড়া আগুন নিয়ন্ত্রন করে নিভাতে পারে। বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত পেট্রোলিয়াম লাইসেন্সের শর্তাবলি অনুযায়ী, ডিপোটি যে পরিমাণ তেল মজুদ করে, তার জন্য চারদিকে কমপক্ষে ৭ থেকে ১১ মিটার পর্যন্ত ফাঁকা জায়গা রাখার নিয়ম থাকলেও সরজমিন মেসার্স রাহিম এন্টারপ্রাইজে গিয়ে, ডিপোর চারপাশে নিয়ম অনুসারে বাস্তবতার মিল পাওয়া যায়নি। বরং অন্যান্য ঘরের সাথে লাগানো অবস্থায় এবং যত্রতত্র ভবন নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে, যা একটি মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে।
এ ব্যাপারে রংপুরের সহকারী বিস্ফোরক পরিদর্শক অশোক কুমার দাস এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাদের রেকর্ড অনুসারে, মেসার্স রাহিম এন্টারপ্রাইজ একটি বৈধ লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান। আমি সরজমিন পরিদর্শন করে যা পেয়েছি তাতে করে লাইসেন্সের শর্তাবলি পূর্ণরূপে পালন করা হয়নি। ইতিমধ্যে তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ডাকযোগে কৈফিয়ত তলব করায় তিনি আমার কাছে সময় প্রার্থনা করেন। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগে যদি লাইসেন্সের যেকোনো শর্ত লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেলে আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে লাইসেন্স বাতিল , জরিমানা এমনকি মামলা পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
এই ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ তেলের ডিপো অবিলম্বে বন্ধ করে এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছে লাকাবাসী ও ব্যবসায়ীবৃন্দ ।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “এটি একটি ভিড়া বোমার মতো। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা প্রতিদিন আতঙ্কে থাকি। কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে এই তেলের ডিপো বন্ধ করা।” এবং আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যদি তা না করা হয় তাহলে আমরা মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে বাধ্য হবো।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার দাস বলেন শর্ত ও আইন অমান্য করে যদি কেউ এধরনের ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
