হাফিজুর রহমান:
আশির দশকে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে স্টুডিও ব্যবসা ছিল বেশ জমজমাট।
সেই সময়ে আলো ছড়িয়েছিল এক নাম— “শতরূপা স্টুডিও”, যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্রোপ্রাইটর আব্দুল আজিজ (জনপ্রিয় নাম আজিজ পাগলা)।
আব্দুল আজিজের বাড়ি করটিয়ায়। ১৯৭০ দশকে তিনি গোপালপুর মেইন রোডে ছানা ডাক্তারের বাড়ি ভাড়া নিয়ে স্টুডিও ব্যবসা শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই ‘শতরূপা স্টুডিও’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও সুনাম অর্জন করে, গোপালপুরের শীর্ষস্থানীয় ফটো স্টুডিও হিসেবে পরিচিতি পায়।
স্টুডিওর সামনেই ছিল ছানা ডাক্তারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাকেন্দ্র, যেখানে কর্মরত ছিলেন বর্তমান ‘শতরূপা স্টুডিও গ্রুপ’-এর স্বত্বাধিকারী মো. শুকুর আহমেদ (শুক্কর মিয়া)।
তৎকালীন সময়ে বেশিরভাগ স্টুডিওতেই সাদা-কালো ছবি তোলা হতো। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছবি তোলা আর রাতভর প্রিন্ট ও ডেভেলপমেন্টের কাজ চলত।
দীর্ঘ রাত জেগে কাজ করতে গিয়ে আজিজ পাগলা মাঝে মাঝে ছানা ডাক্তারের দোকান থেকে স্পিরিট পান করতেন। এই সুযোগে শুক্কর মিয়ার সঙ্গে তার দেনা-পাওনার সম্পর্ক তৈরি হয়। ধীরে ধীরে সুদসহ দেনা বাড়তে থাকে — একসময় তা লাখ টাকায় পৌঁছে যায়।
অবশেষে এক রাতে দেনার চাপে আজিজ পাগলা তার প্রিয় প্রতিষ্ঠান ‘শতরূপা স্টুডিও’-এর মালিকানা হস্তান্তর করতে বাধ্য হন।
এভাবেই ‘শতরূপা স্টুডিও’ আজিজ পাগলার হাতছাড়া হয়ে শুক্কর মিয়ার হাতে চলে যায়।
সেই থেকে শুক্কর মিয়াকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
একটির পর একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে তিনি ‘শতরূপা স্টুডিও গ্রুপ’ নামে একটি ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যে পরিণত করেন।
তবে সময়ের পরিক্রমায় ২০২৫ সালের শুরুর দিকে কানাঘুষায় শোনা যায়— ব্যাংক, এনজিও ও ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন উৎস থেকে প্রায় তিন কোটি টাকার দেনা হয়েছে তার ওপর।
অবশেষে গতকাল (২০ অক্টোবর ২০২৫) রাতের অন্ধকারে, আজিজ পাগলার মতোই শুক্কর মিয়াও ব্যবসা বন্ধ করে স্বপরিবারে গোপনে চলে যান।
দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের যাত্রার অবসান ঘটল শতরূপা স্টুডিও গ্রুপের।
🔹 যে দামে কেনা, সেই দামে বেচা।
ইতিহাস যেন ঘুরে ফিরে নিজেকেই পুনরাবৃত্তি করে—
ন্যায়ের পথ থেকে সরে গেলে শেষমেশ পতন অবশ্যম্ভাবী।
